প্রথম পর্ব
(১) "ভেজা ঘাসের
রাস্তায় হাটছি,
পিছন পিছন
একটা কুকুর
আসছে।
কিছু একটার
গন্ধ শুকবার
চেষ্টা করে
চলেছে।
জনমানব শুন্য
রাস্তা, এত
রাতে কেই
বা বের
হবে তাও
আবার গ্রামের
বাড়িতে।
কুয়াশাও বেশ
পড়েছে, খুব
একটা দেখা
যায় না। রাত
দুটো আড়াইটা
হবে।
গ্রামের রাস্তার
দু পাশ
জুড়েই বেশ
গাছ আর
বড় বড়
ঘাস থাকে
তাই এত
রাতে হাটার
সাহস ও
হচ্ছে না,
যদি সাপ
থেকে থাকে
তারউপর নীলার
ভুতের ভয়
তো আছেই,
সেই যে
হাত খাঁমচে
ধরেছে আর
ছাড়ার নাম
নেই, বাধ্য
হয়ে খালের
ধার ঘেঁষে
চলা রাস্তা
দিয়ে হাটছি। খালের
ওপারটা থেকে
আলো আসছে,
বড় বড়
খড়ের স্তুপ
দেখা যাচ্ছে,
মনে হচ্ছে
ধান সিদ্ধ
করা হচ্ছে। একটা
বাঁশ, আর
সাথে আরেকটা
বাঁশ ধরুনি
হিসেবে এটার
উপর দিয়ে
পার হতে
হবে।
পায়ে কনভার্স
থাকায় আমার
খুব একটা
অসুবিধে হবে
না কিন্তু
নীলার পায়ে
হিল তাও
একেবারে পেন্সিল
হিল ! এটা
পায়ে উঠলে
পানিতে পড়তে
আর সময়
লাগবে না। সাঁকোর
কাছে এসে
দাঁড়িয়েছি পারহবো বলে ধুপ
করে একটা
আওয়াজ হল............।।
লেখাটি ভাল লাগলে অবশ্যই কমেন্ট করে যানাবেন
![]() |
![]() |
শুধুই তোমার জন্যে |
" বেশ তীব্র একটা আওয়াজ
শুনলাম, সেই
সাথে হাতের
উপর নীলা
আরো জোরে
খামচে ধরল। ভয়
ভয় কন্ঠে
বললো, ‘ কিসের
শব্দ হলো
বলতো?’ ‘কি
জানি।
সাঁকো থেকে
বস্তা টস্তা
পড়েছে বোধহয়’
‘কি যে
বলো! এইটুকুন
বাঁশের সাঁকো,তার উপর
বস্তা রাখা
সম্ভব? মনেহচ্ছে,
সাঁকো পার
হতে গিয়ে
কেউ ধুপুস
হয়েছে।‘
‘কি জানি!এত রাতে
কে আসবে
এখানে? গ্রামের
মানুষ রাত
আটটা বাজার
আগেই ঘুম।তোমার
মত সন্ধ্যা
ছয়টার ট্রেন
ধরে রাত
দু’টোয়
এসে স্টেশনে
পৌছার মত
ভীমরতি ধরা
কেউ নেই
এখানে‘ অন্ধকারেই
মুচকি হাসলাম। নীলা
এবার ইচ্ছে
করেই প্রচন্ড
একটা খামচি
দিয়ে বললো,
‘মাস্টার মশাইগিরি
বাদ দিয়ে
টর্চ জ্বেলে
দেখো ঘটনা
কি’ টর্চ
জ্বাললাম।ইতি উতি
তাকালাম কিছুক্ষণ। সাঁকোর
নিচে ছোট
খাটো একটা
খাল বয়ে
যাচ্ছে।
খরস্রোতা, পানি নেই খুব একটা। তবে
কাঁদাটে।
পড়লে নাক
পর্যন্ত ডুবে
যাবে।
‘কিছুই তো
দেখছিনা।
মনে হচ্ছে
বেঁজী টেজি
কিছু একটা
লাফ দিয়েছে।‘ ‘এখানে
বেঁজী আছে?’
‘বেঁজী শেয়াল
সাপ খোপ
সবই আছে। তুমি
এক কাজ
করো, জুতা
খুলে আমার
হাতে দাও,
নয়তো পেন্সিল
হীল নিয়ে
এই মামুলি
বাঁশের সাঁকো
পার হতে
পারবেনা।‘
‘খুব পারব। আমার
এসব অভ্যেস
আছে’ বলেই
হুট করে
আমার হাত
ছেড়ে সাঁকোতে
গিয়ে উঠলো
নীলা।
তরতর করে
অনেকখানি পারও
হয়ে গেল। আমি
শক্ত করে
এপাশটা ধরে
রাখলাম, পাছে
দূর্ঘটনা ঘটে। একটু
পরেই শুনলাম
নীলার গলা,
‘সেফলি রিচড। তুমি
চলে এসো
এবার।‘
একহাতে নীলার
স্যুটকেস নিয়ে
আরেকহাতে সাঁকো
ধরলাম।
এই সাঁকোর
সাথে প্রায়
তিন বছরের
পরিচয়।অসংখ্যবার পার
হয়েছি, কি
রাত কি
দুপুর।
কিন্তু আজ
কি হলো
কে জানে,
মাঝামাঝি আসার
পর হঠাৎই
মনে হলো
মাথাটা দুলছে,সেই সাথে
সাঁকোও।
আশপাশটা লাটিমের
মত ঘুরছে-এরকম একটা
অনুভূতি নিয়ে,
মুহূর্তের মধ্যেই স্যুটকেস সমেত ভূপতন। ঝপাস
করে আওয়াজ
হলো ,এরপর
ওপাশ থেকে
নীলার উচ্চস্বরে
হাসি শুনতে
পেলাম।
‘পেন্সিল হীলের
কাছে চটি
জুতোর পরাজয়!
হাড় গোড়
ভাঙ্গেনি আশাকরি। উঠে
এসো।‘
নীলা হাসছে। বুকসমান
কাদা মেখে
কোনরকমে উঠে
পাশে শক্ত
মাটির উপর
দাঁড়ালাম।পকেট থেকে
টর্চ লাইট
পড়ে গেছে,তবে নীলার
স্যুটকেসটা এখনো ছাড়িনি। নীলা
একটু ঝুঁকে
হাত বাড়ালো। অল্প
স্বল্প চাঁদের
আলো, এই
ক্ষীণ আলোতেও
নীলার অনিন্যসুন্দর
মুখটা দেখতে
পেলাম।কি মোহনীয়
এক ভঙ্গিমায়
হাসছে।
মনে মনে
আওড়ালাম,”আমি
ভুলে যাই,তুমি আমার নও...”
(২) ‘বেশি ঠান্ডা
পানি?’ নীলা
জিজ্ঞেস করলো। ‘খুব
একটা না’
কাঁপতে কাঁপতে
বললাম।
বাড়িতে এসেই
কলপাড়ে এসেছি,গোসল করার
জন্য।নীলাও এলো
পেছন পেছন। টিউবওয়েল
চেপে পানি
তুলতে যেতেই
নীলা বললো,’তুমি বসো,
আমি পানি
তুলছি।‘
‘ব্যাপক শক্তির
অপচয় হবে
কিন্তু।
এমনিতেই আট
ঘন্টার দীর্ঘ
একটা জার্নি
করে এলে।‘ ‘হুহ!আমি ওসব
পারি’ বলেই
কোমরে শাড়ীর
আঁচল গুঁজে
টিউবওয়েল চাপতে
শুরু করলো।
(৩) নীলার
সাথে আমার
বিয়ে হয়েছে
প্রায় ছ’মাস, পারিবারিকভাবে
কনে দেখা
এবং বিয়ের
বন্দোবস্ত।ছোটবেলা
থেকেই মুখচোরা
স্বভাবের বলে
কখনোই মেয়েদের
সাথে তেমন
করে ঘনিষ্ঠ
হতে পারিনি। সমবয়সী
মেয়েরা ছিল
আমার কাছে
মূর্তিমান আতঙ্কের মত।ক্বচিৎ
কদাচিৎ কারো
সাথে দু’একলাইনের কথোপকথন
হয়ে গেলে
উপলব্ধি করতাম,
পরবর্তী মিনিট
দশেকের জন্য
হার্ট বিট
কয়েকগুন বেড়ে
গেছে।
শহুরে পড়াশুনা
শেষ করে
এই অজপাড়া
গাঁয়ের কলেজে
শিক্ষকতা করতে
আসার ব্যাপারটা
অনেকের কাছে
মহিমাময় কিংবা
খ্যাঁত মনে
হলেও আমার
কাছে কখনোই
খুব অস্বাভাবিক
কিছু মনে
হয়নি।
গ্রামের প্রতি
খুব যে
টান ছিল
বা আছে,
তা নয়-
তবে নিরিবিলি
পরিবেশটা সবসময়ই
ছিল প্রিয়। নীলার
সাথে বিয়ে
হবার অনেক
আগে থেকেই
আমি এখানে,শহরে তখন
মাঝে সাঝে
যাওয়া হতো
কলেজের প্রয়োজনে
কিংবা বড়মামার
জরুরী তলব
পেলে।
মাস ছয়েক
আগে বড়মামার
অসুস্থতার খবর দেয়া টেলিগ্রাম পেয়ে
ঢাকা যেতে
হলো।
যাওয়ার পর
মামা বললেন,’বাপ,তোকে
মিথ্যা সংবাদ
দিয়ে এইসময়ে
ডেকে আনালাম,মামার প্রতি
রাগ হোস
না।
আমি তোর
জন্য একটা
মেয়ে দেখে
রেখেছি,যদি
তুই রাজি
থাকিস তাহলে
আগামীকালই বিয়ে।‘ অবাক হলেও
সেটা চেপে
গেলাম।
বড় মামার
অবাধ্য কখনো
হইনি।
মামা বললেন,’কন্যা মাশাল্লাহ
খুবই সুন্দর।এবছরই
ইন্টার পাশ
করবে,রেজাল্টের
অপেক্ষায় আছে। মেট্রিকে
চার বিষয়ে
লেটার মার্ক
ছিল।পরিবার ভালো,সহায় সম্পদ
ও আছে
বেশ।বড় দুই
বোনের বিবাহ
হয়ে গেছে,সে তৃতীয়। ছোট
আরো দু’জন আছে।‘ ‘সবই
তো বুঝলাম
মামা।কিন্তু এত
তাড়াহুড়োর বিয়ে...মানে,আমিও তো
কোন প্রস্তুতি
নিয়ে আসিনি। তাছাড়া
টাকা পয়সার
ব্যাপারও তো
আছে।‘বললাম আমি। ‘সব
ব্যবস্থা হবে।তুই
ভাবিস না।আর
তাড়াহুড়োটা হচ্ছে ওদের জন্য।মেয়েকে নাকি
পাড়ার কিছু
বখাটে ছেলেপেলে
উত্যক্ত করে,যন্ত্রনা দেয়।মুখে
এসিড মেরে
দিবে,রাস্তা
থেকে তুলে
নিয়ে যাবে-এসব হুমকি
ধামকি দিয়ে
চিঠিও এসেছে
বাসায়।‘
‘আর মামা...আমি তো
গ্রামে পড়ে
আছি,মেয়ে
কি গ্রামে
যেতে র
করলাম।
‘কেন হবেনা?আলবৎ হবে। তুই
কিচ্ছু ভাবিস
না।
তোর কাজ
শুধু কবুল
বলা।
তিনবার বলবি,’কবুল কবুল
কবুল’ ব্যস’
অবশ্য বিয়ের
রাতে বুঝতে
পারলাম,মামা
যেমনটা বলেছেন-
ঘটনা এত
সহজ না। বরাবরই
শুনে আসছি,বাসর রাতে
ফুল দিয়ে
সাজানো বিছানায়
নতুন বঊ
লাজরাঙা হয়ে
গুটিসুটি মেরে
বসে থাকে,বরের জন্য
অপেক্ষা করে। আমার
ক্ষেত্রে হলো
উল্টোটা।
বাসর নীলাদের
বাসায় হলো,সেজন্য হয়তো। একঝুড়ি
গাঁদাফুল আর
কাঁটাওয়ালা গোলাপ দিয়ে সাজানো বিছানায়
বসে,দু’তিনবার কাঁটার
খোঁচা খেয়ে
অপেক্ষা করছিলাম
আমি,নীলার
জন্য।
প্রায় মিনিট
চল্লিশেক পরে
সে এলো।বেশ
সহজ স্বাভাবিক
ভঙ্গি।
লাল পাড়ের
একটা কাতান
গায়ে জড়ানো,অনেকটা আনাড়ীভাবে। মাথার
একপাশে বেলীফুলের
একগাছি মালা। ঘরে
ঢুকে শান্ত
ভঙ্গিতে দরজা
বন্ধ করলো,এরপর কোনোরকম
জড়তা ছাড়াই
বিছানায় এসে
বসল এবং
আমার দিকে
তাকিয়ে বললো,
‘এত তাড়াহুড়োর
বিয়ে হলো,আপনার কি
কোন ঝামেলা
হয়নি?’ একটু
ভ্যাবচ্যাকা খেয়ে বললাম, ‘না,তেমন
একটা...’ ‘কিন্তু আমার হয়েছে।অনেক ঝামেলা
হয়েছে।মাত্র দু’দিন আগে
যখন জানলাম,পরশু রাতে
আমার বিয়ে-তখন আর
কিছুই করার
নেই।একদিনের মধ্যে
কি আর
কেনাকাটা করা
যায়?গায়ে
হলুদের অনুষ্ঠান
হলো,একেবারেই
সাদামাটা।
আপনার তো
বোধহয়,কিছুই
হয়নি।তাইনা?’ ‘ইয়ে,হয়েছে আরকি!
এইযে,হাতে
মেহেদী দিয়েছে
মামাতো বোনেরা’হাত মেলে
তাকে দেখালাম। ‘কি
বিশ্রী ডিজাইন!
যাক,তবু
যে কিছু
একটা হয়েছে,তা ই যথেষ্ঠ।
এবার জরুরী
কথাটা বলি। আপনি
হয়তো শুনেছেন,
পাড়ার বখাটে
পোলাপানের ঝামেলা থেকে মুক্তিলাভের জন্য
আমাকে তাড়াহুড়ো
করে আপনার
গলায় ঝুলিয়ে
দেয়া হচ্ছে?’
‘হ্যা,মামার
কাছে শুনলাম।‘ ‘ঘটনা
মিথ্যা।
বখাটেরা আমাকে
জ্বালানোর সাহস কোনদিনই পায়নি,কারন
এ পাড়ার
বখাটে দলের
লীডার আমার
পরান সখা,মানে প্রেমিক। এবার
বুঝলেন,বাবা
আমাকে প্রেম
থেকে নিষ্কৃত
করতেই আপনার
গলায় ঝুলিয়ে
দিয়েছেন।‘
‘ও আচ্ছা।‘ ‘শুধু
ও আচ্ছা,আর কিছুনা?’
‘আর কিছু
কি?’ ‘আসল
কথাই তো
শুনেননি।আগামী ছ’মাসের মধ্যেই
আমি আমার
পরান সখার
কাছে চলে
যাব।কাজেই,এই
ছ’মাস
আমি আপনার
শো পিস
স্ত্রী হয়ে
থাকতে পারি,যদি চান। আবার,পুরো ঘটনা
সবাইকে বলে
দিয়ে যদি
ডিভোর্সও দিয়ে
দেন,তাতেও
আমার আপত্তি
নেই।
বরং লাভ।তবুও
অনুরোধ করব,
আপাতত ডিভোর্স
না দিতে।‘ ‘হুম’
‘এই বাসায়
থাকতে থাকতে
দম বন্ধ
হবার দশা। কটা
দিন ছুটি
কাটাতে মন
চাইছে।আমি আপনার
সাথে গ্রামে
যাব’ ‘আচ্ছা’
‘সব কথা
হু হা
আচ্ছা দিয়েই
চালিয়ে দেবেন?
বাসর রাতে
এত মারাত্মক
একটা ঘটনা,তাও সাড়ে
পাঁচ লাখ
টাকা গচ্চা
দিয়ে ঘন্টা
তিনেক আগে
বিয়ে করা
নতুন বউয়ের
মুখে শুনতে
খারাপ লাগছে
না?’ আমি
হাই তুলে
বললাম,’না,লাগছেনা নীলা। আমি
জানি,আমার
কাছে কিছুই
থাকেনা।তুমিও থাকবেনা,এটাই স্বাভাবিক। যাকগে,ঘুমোচ্ছি আমি।‘ বলেই
পাশ ফিরে
শুয়ে পড়লাম। এভাবেই
সমাপ্তি ঘটলো
আমার বিয়ের
রাতের।
আমাদের ফেসবুক পেজ থেকে ঘুড়ে আসতে এখানে ক্লিক করুন
MUHIBBULLAH MASRUR
লেখাটি ভাল লাগলে অবশ্যই কমেন্ট করে যানাবেন