Sunday, February 21, 2016

নি:শব্দ ভালবাসা

http://valobasharkostergolpo.blogspot.com/
'ফাহিম'
সুদর্শন আর একেবারেই পাগলাটে একটা ছেলে। 
সারাদিন  কাধে একটা গীটার নিয়ে ঘুরে বেড়ায়।
ভার্সিটির সবাই ওকে গীটার-বয় বলেই  ডাকে।
ভার্সিটির মেয়েগুলো যেন ফাহিম  বলতেই  অজ্ঞেন।
অথচ দুই চক্ষে সহ্য হয়না ছেলেটাকে আমার।
বি.বি. -৩য় বর্ষের ছাত্রী আমি।
ফাহিম  আমার বছর এর সিনিয়র।
ওকে আমার তেমন ভাল লাগত না বলে
কিছুটা এড়িয়েই চলতাম আমি তাকে।
কিন্তু হঠাৎ একদিন কোন কথাবার্তা ছাড়াই
 আমাকে প্রপোস করে বসলো।
কোন উত্তর  না দিয়ে এড়িয়ে গেলাম।
আমি জানি, পিছনে ঘুরঘুর  করে বিরক্ত করার ছেলে নয়
কিন্তু কোথা থেকে যেন আমার  নাম্বারটা  যোগাড়  করে ফেলেছে।
প্রতিদিন রাতে শুধু  একটা করে মেসেজ করত
কখনো ফোন করত না
আমি কোন রিপ্লাই না দিয়ে শুধু ওর মেসেজ গুলো
পড়তাম প্রতিদিন।
ব্যাপারটা ধীরে ধীরে আমার ভাল  লাগতে শুরু করলো।
মনের অজান্তেই কখন যে ভেতরে ভাল লাগার বীজ
বপন করে বসে আছি বুঝতেই পারিনি।
হঠাৎ একদিন মেসেজ দেওয়া বন্ধ করে দিল। লাগাতার তিনদিন কোন মেসেজই দিল না।
পরপর তিনদিন ওর কোন মেসেজ
না পেয়ে কেমন যেন অস্থির লাগছিল আমার
পরদিন  ভার্সিটিতে গিয়ে মনে মনে ওকে খুঁজতে থাকলাম।
হঠাৎ দেখি শিমুর খুব কাছাকাছি বসে ওকে গান শোনাচ্ছে।
বুকের  ভেতর গত তিনদিনের চেপে থাকা আগুনটা যেন এবার দাউ দাউ করে জ্বলে উঠলো।
নিজেকে আর সামলাতে পারলাম না।
কিছু  চিন্তা না করে  সবার সামনেই ওকে গিয়ে ধমক লাগালাম এবং সেই সাথে ওকে ভালবাসার কথাটাও  বলে দিলাম।
ফাহিম কিছু বলল না। একটা শুধু মুচকি হাসি দিয়ে
http://valobasharkostergolpo.blogspot.com/
http://valobasharkostergolpo.blogspot.com/

পকেট থেকে একটা লাল গোলাপ বের  করে দিল। যেন জানত আমি এমনটা করব।
খানিকটা অবাকই হলাম।
পরে জানতে পারলাম 
হঠাৎ আমাকে মেসেজ পাঠানো বন্ধ করে দেওয়াআমাকে জেলাস করাএর পুরোটাই  সাজানো ছিল।
আর তার প্রধান  সহযোগী ছিল
আমার সবচেয়ে কাছের বান্ধবী শিমু
চোখের  জলটা আর বাঁধ মানল না।
সবার  সামনেই ভ্যাঁ করে কেঁদে  দিলাম।
একটা কান্না যে মানুষকে এতটা সুখ  দিতে পারে
জীবনে এটা প্রথম অনুভব করলাম।
শুরু হল ভালবাসার আকাশে কষ্ট-সুখের
রঙধনু  মিশিয়ে একই স্বপ্ন দুটি হৃদয়  দিয়ে আঁকা।
 আমার নাম দিয়েছিল পাখি।
আজব আজব পাগলামি করত  যা আমাকে একই সাথে
কাঁদাতআবার হাসাতও
অদ্ভুত একটা অনুভুতি।
আমাকে নিয়ে ওর গান গাওয়া
স্বপ্নের ভেলায়  চড়ে তারার দেশে যাওয়া।
হাত ধরে বৃষ্টিতে ভেজা।
মাঝ রাতে আমাকে দেখার  নাম করে
আমার বাড়ির সামনে এসে দাড়িয়ে থাকা।
ক্লাস ফাঁকি দিয়ে মুভি দেখতে যাওয়া।
একই স্বপ্ন হাজার বার ভেঙ্গে নতুন  করে গড়া।
সব কিছু মিলিয়ে যেন আমার
পৃথিবীতে সুখের স্বর্গ  ও।
দেখতে দেখতে একটা বছর  কেটে গেল।
ওর  বি.বি. শেষ হল আর আমি ৪র্থ বর্ষে উঠলাম।
যে ভয়টা বুকের ভেতর সব সময় কাজ করত
সেটাই হল। আমার আর ফাহিমের  সম্পর্কের
কথাটা বাসায় জানা জানি হয়ে গেল।
আব্বু আম্মুর ইচ্ছের বাইরে আপু
পালিয়ে গিয়ে তার ক্লাস-মেট সুহেল  ভাইয়াকে
বিয়ে করেছিল। ওদের ৪বছর  এর  রিলেশন
বিয়ের এক বছরের মাথায় ছাড়াছাড়ি।
ব্যাপারটাই যেন আমার স্বাধীনতার একমাত্র ঘাতক।
সাময়িক ভাবে আমার ভার্সিটি যাওয়া বন্ধ হয়ে গেল
ফোনটাও  আব্বুর কাছে চলে গেল
এক কথায় আমি এখন বন্দি।
আপুর  ব্যাপারটার পর আব্বু অনেক অসুস্থ হয়ে পড়েছিল
মানসিকভাবে তিনি প্রচুর ভেঙ্গে পড়েছিলেন।
এখনো সেই ধকল  কাটিয়ে উঠতে পারেননি।
আব্বুর ইচ্ছের বাইরে কিছু করা বা বলা মানে তাকে মৃত্যুর
পথে একধাপ এগিয়ে দেওয়া।
তাই কিছুই আর  বলতে পারলাম না।
এক সপ্তাহের মধ্যে আমার বিয়ে ঠিক করলো
আব্বুর ব্যবসায়ী বন্ধু রাজ্জাক আঙ্কেলের ছেলে সুমন এর সাথে।
নিঃশব্দে কাঁদা ছাড়া তখন আর কিছুই যেন  করার নেই  আমার। এদিকে ফাহিম পাগল এর মত চেষ্টা করছে
আমার সাথে যোগাযোগ করার।
কোন উপায় না পেয়ে শিমুকে আমার  বাসায়
পাঠালো খোঁজ নেবার জন্য।
মানুষটা আমাকে অন্ধের মত ভালবাসে।
এত বড়  অন্যায় কি করে করবো আমি?
কি করে কাঁদাবো এই মানুষটাকে??
ঠিক  করলাম  পালিয়ে যাব।
সবাইকে ফাঁকি দিয়ে অনেক কষ্ট করে
বাসা থেকে বেরও হলাম।
কিন্তু আপুর  চলে যাওয়ার পর আব্বু আম্মুর
কষ্টের চিত্রগুলো  চোখের সামনে আবারও
ভেসে উঠলো। পারলাম না।
একটা ফোন  ফ্যাক্স এর দোকান  থেকে
কাদতে কাদতে নাহিদ  কে সরি বলে
অর্ধেক রাস্তা থেকেই  আবার  বাসায় ফিরে আসলাম।
এসে দেখি প্রত্যাশা অনুরূপ বাসার  সবাই
চুপচাপ বসে আছে। যে আব্বু আমাকে কোন  দিন
ধমক দিয়ে কথা বলেননি সে আব্বু আমার  গায়ে হাত তুললো। সারা রাত কাঁদলাম।
কান্নাই যেন আমার একমাত্র সঙ্গী এখন।
না পারছি আব্বু আম্মুকে কষ্ট  দিতে
না পারছি ফাহিমকে কাঁদাতে।
আর না পারছি নিজে কষ্ট সহ্য করতে।
তারপরও আব্বু-আম্মুর খুশির কথা চিন্তা করে
সবকিছু মেনে নিলাম। বিয়েতে রাজি হয়ে গেলাম।
আর কখনো ফাহিম এর  সামনে
দাঁড়ানোর মত মুখ আমার  নেই।
শিমুর মাধ্যমে সব কিছু  জেনে
শুধু একবার দেখা করতে বলে পাঠাল।
পরদিন শিমুর সাথে শিমুর বাসায় গেলাম।
আগে থেকেই সেখানে ফাহিম উপস্থিত ছিল।
আমাকে দেখে একটা মুচকি হাসি দিল।
আমি তখন লজ্জায় মাথাটা নিচু করে ছিলাম।
আর কাঁদছিলাম।
কান্নার কারনে কোন কথাই বলতে পারছিলাম না।
কথা বলার শক্তিটা যেন  হারিয়ে ফেলেছি।
কাঁপতে কাঁপতে ওর  সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম।
 কাছে এসে আমার হাত ধরে বলল-
আমি শুধু  তোমাকে ভালবাসি মিথিলাআর কাউকে নয়।
জীবনে একজনকেই ভালবেসেছি।
আর তাকে ভুলে অন্য কাউকে ভালবাসা
আমার পক্ষে সম্ভব নয়।
বিশ্বাস করো আমি শুধু চেয়েছিলাম
তোমাকে নিয়ে সুখী হতে।
কিন্তু আল্লাহ আমার কপালে এত বড় সুখ রাখেননাই।
তাই বলে কি আমি তোমাকে ভুলে অন্য কাউকে ভালবাসব?
এটা যে আমার পক্ষে সম্ভব না মিথিলা।
তোমার সাথে আমার বিয়ে হয়নি তাতে কী হয়েছে
তোমাকে ভালবাসতে তো আর কোন বাধা নেই।
আমি তোমাকে সারাজীবন ভালবাসব।
আর এতটাই ভালবাসব যে তা তুমি কখনোই ভুলতে পারবেনা।
মিথিলা! ভালবাসার জন্যে বিয়ে শর্ত নয়
কিন্তু বিয়ের জন্যে ভালবাসা শর্ত।
তোমাকে ভালবাসি তাই তোমাকে আমি সুখী দেখতে চাই।
চাই এই সুখ তুমি আমার কাছ থেকে পাও
বা অন্য কারও কাছ থেকে পাও।
আমার কথা কখনো চিন্তা কোরোনা।
আমি সবসময় তোমাকে ভালবেসে বেঁচে থাকব।
আজ এই শেষ সময়ে একটা কথাই শুধু জিজ্ঞেস করব
আমকে ভুলে যাবেনা তো???
উত্তরে কিছুই বলতে পারলাম না।
বুক  ফেটে কান্না এলো।
ওর এই সীমাহীন  ভালবাসার কাছে আমি খুবি নগন্য
কোথায় রাখবো ওর এতোটা ভালবাসা।
কী দিয়ে শোধ  করবো আমি।
কান্নাটা আর  থামাতে পারলাম না।
চোখের  সামনে দাঁড়িয়ে থাকা আমার ভালবাসার মানুষটার দিকে তাকিয়ে অঝোরে কাঁদলাম।
 হাত দিয়ে চোখের জ্বলটুকু মুছে দিল।
আমার শেষ  নিঃশ্বাস পর্যন্ত এক বিন্দুও
ভুলতে পারবো না ওকে।
কিন্তু মুখে এই কথাটা বলতে পারলামনা ওকে।
কাঁদতে কাঁদতে দৌড়ে চলে এলাম ওখান থেকে।
আর মনে মনে বলতে থাকলাম
http://valobasharkostergolpo.blogspot.com/
http://valobasharkostergolpo.blogspot.com/

আমি ভালবাসি ফাহিম তোমাকে
আমি ভালবাসি ফাহিম তোমাকে








Note: যেই বাবা-মা এতটা আদর-সোহাগ দিয়ে আমাদের বড় করে তুলেছেন
        নিজের কষ্টের বিনিময়ে হলেও তাদের সুখটাকে প্রাধান্য দেওয়া  প্রয়োজন ।

পুরো গল্পটি pdf আকারে ডাউনলোড করতে এখানে ক্লিক করুন
     (লিঙ্কে ক্লিক করে উপরের ডান পাশ থেকে Skip Ad এ ক্লিক করুন)

--MUHIBBULLAH MASRUR


লেখাটি ভাল লাগলে অবশ্যই কমেন্ট করে যানাবেন



Post Comment

No comments: