কিছু কিছু কষ্ট আছে যা কখনো ভুলা যায় না, কষ্ট শুধু মানুষকে যন্ত্রণার
আগুনেই পুড়িয়ে মারে, এইতো সেদিন ‘মুন্নির’ সাথে আমার পরিচয় হল, কিভাবে
যে ৬ টি বছর কেটে গেল টেরই পেলাম না, ওর সাথে আমার প্রথম দেখা হয়
কলেজে,আমি যখন ইন্টার ২য় ইয়ার এ পড়ি তখন আমাদের কলেজে ফাস্ট ইয়ার এ
ভর্তি হয় মুন্নি,লাইব্রেরীর সামনে আম গাছের নিচে দাড়িয়ে ওর দুইটা
বান্ধুবির সাথে কথা বলছিল আর হাসছিল, কি সুন্দর ওর মুখের হাসি, হাসলে গালে
টোল পরে যায়,প্রথম দেখায়ই প্রেমে পড়ে গেলাম। আজও ভুলতে পারি না সেই
অনুভুতির কথা, সেই প্রথম দেখা থেকেই কেন জানি আমি ওর প্রতি দুরবল হয়ে যাই,
সারাক্ষণ ভাবি ওর কথা, প্রতিদিন তাকিয়ে থাকি ওর দিকে আর ও আমার দিকে
তাকিয়ে মুসকি হাসত মাঝে মাঝে, কতো কথা বলতে চাইতাম ওকে কিন্তুু কিছুই বলতে
পারতাম না কারন তখনও আমাদের পরিচয় হয়নি, আমার সপ্নের রাজ্যে তো ও বাসা
বেধে ফেলেছে অনেক আগেই কিন্তু আমি তো ওকে কিছুই বলতে পারছি না,শুধু চেয়ে
থাকি সারাক্ষণ,কি যে করবো কিছুই বুজতে পারছিলাম না,আমার মন তো অস্তির ওর
সাথে কথা বলার জন্য কিন্তু কোন উপায়ই খুজে পাচ্ছিলাম না,হঠাৎ এক দিন কলেজে
গিয়ে দেখি আমার ফুফাতো বোন কলির সাথে দাড়িয়ে দাড়িয়ে কথা বলছে মুন্নি,
কলি যে এই কলেজে ভর্তি হয়েছে তা তো আমি ভুলেই গিয়েছিলাম, আজ কলির সাথে
মুন্নিকে দেখে আমার মনটা খুশিতে ভরে উঠলো। আনন্দে দিশেহারা হয়ে গেলাম,আমার
সাহস অনেকটা বেড়ে গেল কাছে গিয়ে বললাম কিরে কলি কেমন আছিস? কলি বললো-
ভাল আছি ভাইয়া, তুমি কেমন আছ? ততক্ষণে আমি মুন্নির দিকে তাকিয়ে থেকে
বললাম ভাল আছি, কেন যেন মুন্নি আমার দিকে এক পলকে তাকিয়েছিল। ওর হরিনের মত
চোখ দুটি আজ ও আমার কল্পনায় ভেসে বেড়েয়, ভুলতে পারি না আমি ওর চোখের
দৃষ্টি। তারপর ক্লাস শুরু হয়ে গেল ওরা ক্লাস এ চলে গেল,আমি কিছুক্ষণ
দারিয়ে থেকে ক্লাস এ চলে গেলাম কিন্তু কিছুতেই ক্লাসে মন বসাতে পারলাম
না,বার বার ওকে দেখতে ইচ্ছে করছিল,কিন্তু উপায় কি,ও যে ক্লাস করছে, তারপরও
ওর ক্লাসের পিছনের জানালা দিয়ে দূর থেকে ওকে দেখতে লাগলাম, যত দেখি তত
ভাল লাগে এই ভাললাগা যে শেষ হবার তা আমি খুব ভালই বুঝতে পারছিলাম। এত
সুন্দর মানুষ হতে পারে তা আগে কখনো ভাবিনি, মনে হয় বিধাতা নিজ হাতে ওকে
তৈরি করেছে (শুধু আমার জন্য)। সেই দেখা থেকে ওর প্রতি আমার ভালবাসা যেন আরও
বেড়ে গেল, মনে ভালবাসা এলে কেমন লাগে তা এই প্রথম বুঝতে পারলাম পৃথিবীটাই
যেন রঙ্গিন মনে হচ্ছে, আর নিজেকে মনে হচ্ছে উরু উরু চাঞ্চল্য প্রজাপতির
মত, এর মধ্যে কয়েক দিন চলে গেল কিন্তু কিছুতেই আমার মনের কথা ওকে জনাতে
পারলাম না, ওর কথা ভেবে রাতে ঘুমাতেও পারিনা, আমার কল্পনায় বার বার ভেসে
বেড়ায় ওর সেই চাঁদ মুখক্ষানি,অনেক চেষ্টা করেও বলতে পারিনি আমার মনের
কথা, বলবো বলবো করেও বলতে পারছিনা। সামনে গেলেই যেন সবকিছু ভুলে যাই, হঠাৎ
মাথায় চিন্তা এল যে কলিকে দিয়েইতো মুন্নিকে আমার ভালবাসার কথা জানাতে
পারি, কলি দেখলাম দুইদিন কলেজে আসছে না, তার পরের দিন শুক্রবার তাই আমি
কলিদের বাড়ি গেলাম, গিয়ে দেখি বাড়ির সামনেই ও দাড়িয়ে আছে, কলি আমাকে
দেখেই বললো ভাইয়া কেমন আছ? আমি বললাম ভাল, তুই কেমন আছিস? ও বললো অনেক ভাল
আছি, আমি বললাম বাব্বা অনেক ভাল! এত ভাল থাকার কারন কি? ও বললো কারন আছে
কিন্তু এখন বলবো না, আমি বললাম বলতে হবে না আমি তোর কাছে একটা কাজে এসেছি
আমার কাজটা করেদেনা প্লিজ, ও বললো তাইতো বলি তুমি তো কখনো আসনা আজ কি মনে
করে? বলে ফেল, আর হাঁ আম্মুর কাছ থেকে টাকা নিয়ে দিতে হবে কিন্তু, আমি
বললাম আচ্ছা ঠিক আছে, কিন্তু আগে প্রমিজ কর কাজটা করে দিবি,ও বললো আগে বলো,
দেখি পারব কিনা আমি বললাম তুই ই পারবি,ও বললো এত না ঘুরিয়ে বলোতো আমাকে
কি করতে হবে। আমি বললাম আচ্ছা তোর সাথে যে ওই দিন লাল ড্রেস পরা একটা মেয়ে
দাড়িয়ে ছিল ওর নাম কিরে? ও বললো কেন?আমি বললাম না এমনিতেই, বলনা ওর নাম
কি?ও বললো ওটা আমার বান্ধুবি ওর নাম মুন্নি, আমি বললাম অনেক সুন্দর তো
নামটা, দেখতে যেমন সুন্দর নামটাও কিন্তু তেমনি সুন্দর, কলি বললো কি? ও কি
আমার চেয়েও সুন্দর? এই বলে কলি একটু রাগ করলো, আমি বললাম আরে না বোকা
তুইতো অনেক সুন্দর, ও কি তোরচেয়ে সুন্দর হতে পারে?, এই কথা বলতেই কলি হেসে
দিল, বললাম কলি আমি মুন্নিকে........, শেষ করতে পারলাম না এতটুকু বলতেই
কলি বুঝে ফেলেছে বললো ও আচ্ছা!! তাই বলো এতক্ষনে বুঝলাম কেন তুমি ওর এত
প্রশংসা করতেছ, কলি বললো আমি পারবোনা তোমাকে এ বেপার সাহায্য করতে, আমি
কলির হাত ধরে বললাম প্লিজ লক্ষ্মী বোন আমার, আমাকে একটু হেল্প করনা, আমার
হয়ে তুই মুন্নিকে বলনা যে আমি ওকে ভালবাসি, কলি আমাকে বললো কবে থেকে এত
ভালবাসা হা......., তলে তলে এত দূর......? আমি বললাম যেদিন প্রথম কলেজে ওকে
দেখেছি সেদিন থেকেই ওকে আমার প্রচণ্ড ভাল লাগে, আমি ওকে অনেক ভালবেসে
ফেলেছি, অনেক বার বলার চেষ্টাও করেছি কিন্তু বলতে পারিনি, তুই একটু বলে দে
না ওকে, অনেক বলে কলিকে রাজি করালাম, কিন্তু সে আমাকে বললো একটা চিঠি
লিখেদিতে, আমি জিবনে কখনো চিঠি লিখিনি। কিসের থেকে কি লিখে ফেলেছি
জানিনা।আমি লিখেছিলাম................
*মুন্নি*
কয়েক দিন কলেজে তোমাকে দেখছি না, জানিনা তুমি কেমন আছ, হয়তো তুমি আমাকে চেননা। তুমি যে কলেজে পড় আমি সেই একই কলেজে পড়ি, তোমার বান্ধুবি কলির কাছে আমি তোমার নামটা যেনেছি, অনেক সুন্দর তোমার নামটা তারচেও সুন্দর তুমি, তোমাকে যেদিন প্রথম কলেজে দেখি সেই দিন থেকেই আমার ভিতরে সুন্দর একটা অনুভুতির জন্ম হয়ছে, যা আমাকে বার বার দুর্বল করে দিচ্ছে এটা অন্যরকম একটা ভাললাগা,কাউকে ভাললাগা কি অন্যায় কিনা তা জানিনা, তবে তোমাকে আমার ভাল লাগে আর সেই ভাললাগা থেকেই তোমাকে আমি কখন যে এতটা ভালবেসে ফেল্লাম আমি নিজেও জানিনা,অনেক ভালবেসে ফেলেছি তোমাকে, তোমার কথা ভেবে কেটে যায় আমার সারা বেলা, জানিনা আমি কোন ভুল করেছি কিনা, তবে শত ভুল আর বাধা পেরয়ে আমি তোমার হতে চাই, এই মনটা সারাক্ষণ ভেবে যায় তোমার কথা, নিস্পাপ এই মনটাকে কি দিয়ে বুঝাব বল,আমি যে আর পারছি না, I LOVE YOU *মুন্নি* I LOVE YOU
এই চিঠিটা পাওয়া মাত্রই তুমি আমাকে উত্তর দিও। অপেক্ষায় থাকব
ইতি-
(স্বপ্নের মানুষ)
তারপর কলিকে চিঠিটা দিয়ে আমি চলে গেলাম, আমি কলির কাছে জানতে পারলাম চিঠিটা ও মুন্নিকে দিয়ে দিয়েছে, কিন্তু এক সপ্তাহ হয়ে গেল আমি কোন উত্তর পেলাম না, একদিন কলেজে গিয়ে দেখি কলি আর মুন্নি দারিয়ে আছে, কলি আমাকে ডেকে বললো, ভাইয়া এদিকে এস। কলির ডাকে আমি ওদের কাছে গেলাম, আজকে অসাধারন লাগছে মুন্নিকে, এর মাঝে আস্তে আস্তে মুন্নিকে কি যেন বললো কলি,এরপর কলি বললো আমি একটু দোকানে যাচ্ছি তোমরা কথা বল, এই প্রথম মুন্নির সামনা সামনি আমি দারাবার সুযোগ পেলাম, এর আগে মুন্নি আমাকে তেমন ভাবে চিনতো না, কলি হয়তো চিনিয়ে দিয়েছে যে আমিই ওকে চিঠিটা দিয়েছি,মুন্নি আমাকে বললো আপনিই কি কলির মামাতো ভাই? আমি বললাম হা, ও হেসে আমাকে বললো ভাইয়া, আপনি মনে হয় আমাকে একটা চিঠি দিয়েছিলেন?চিঠির কথা শুনে আমি লজ্জায় আর ওর দিকে আর তাকাতে পারলাম না, আমি নিচের দিকে তাকিয়ে বললাম হা, ও বললো ভাইয়া আমিতো এখনো অনেক ছোট, এই মুহূর্তে এরকম একটা সম্পর্কে জারানো কি ঠিক হবে আমার জন্যে?আমি কিছু বলতে পারছিলামনা, আমার হার্টবিট বারতে লাগলো,আমি নিচদিকে তাকিয়েই বললাম ঠিক আছে আমি তাহলে এখন যাই, এই বলে আমি চলে এলাম, ওর সামনে গেলে কেন আমার সবকিছু এমন উলট-পালট হয়ে যায় কিছুই বুঝতে পারছিলামনা, তারপর দশ বারো দিন চলে গেল ওর সাথে আমার কোন কথা হয়না ওকে দেখলে আমি অন্য দিক দিয়ে চলে যেতাম, ভাবলাম আর কখনো ওর সামনে যাবো না, আমাকে দিয়ে এগুলো কিচ্ছু হবেনা, তারপরও ওকে ভাবতে আমার ভাল লাগতো, অনেক দিন হয়ে গেল ওর সাতে আমার দেখা হয় না, একদিন কলি আমাকে বললো মুন্নি নাকি আমাকে খুজতেছে, কলির কথা শুনে আমি ততটা গুরুত্ত দিলামনা, আমি কয়েকদিন কলেজে যেতে পারি নাই যার কারণে কলি বা মুন্নি কারও সাথেই আমার যোগাযোগ হয়নি, তারপর একদিন আমি কলেজে গিয়ে দেখি আমাদের কলেজের সামনে ছোট একটা ফুল বাগান ছিল ওখানে দারিয়ে আছে মুন্নি, আমাকে দেখে এগিয়ে এসে বললো ভাইয়া অনেক দিন আপনাকে দেখছি না কেমন আছেন? আমি তারপরও ওর দিকে তাকাতে পারছিলামনা অনেক কষ্টে ওর দিকে তাকিয়ে বললাম ভাল, তুমি কেমন আছ? ও বললো জি ভাল আছি, আজ ও এমন ভাবে সেজেছে যে অনেক সুন্দর লাগছে ওকে, মনে হয় ডানা কাটা পরি মাটিতে নেমে এসেছে, আমি কিছুক্ষণ এক দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে থেকে বললাম তুমি অনেক সুন্দর, ও আমাকে বললো কি যে বলেন না ভাইয়া, আমি বললাম সত্যি বলছি একটা মানুষ এত সুন্দর হতে পারে এটা আমার জানা ছিল না, তারপর ও সজোরে হেসে বললো আপনি পারেনও ভাইয়া। এভাবে প্রতিদিন আমাদের কথা হত, কথা বলতে বলতে এক সমায় আমাদের প্রেম হয়ে যায়, একজন অন্যজনকে না দেখে থাকতে পারতাম না, ও আমাকে বলতো তোমাকে একদিন না দেখলে মনে হয় যেন আমার দম বন্ধ হয়ে যায়, আমিও ওকে না দেখলে থাকতে পারতাম না, ও আমাকে গান শুনাত, একদিন তোমাকে না দেখলে বড় কষ্ট হয়,সেই দিনটাই যেন আমার বন্ধু নষ্ট হয় বড় কষ্ট হয়। ওকে পেয়ে মনে হল আমি যেন বিশ্বটাকে জয় করে ফেলেছি, এভাবে প্রায় সাত মাস চলে গেল, এরই মধ্যে আমার ইন্টেরমিডিয়েট শেষ হয়ে গেল, বাবা আমাকে ডিপ্লমা পড়ানোর জন্য ঢাকা পাঠাবে বলে ঠিক করলেন, কিন্তু মুন্নি কুমিল্লায় থাকবে আর আমি ঢাকায় চলে যাব এটা কিছুতেই আমার মন চাচ্ছিল না, মুন্নিকে বল্লে ও আমাকে ঢাকাতেই ডিগ্রি পরার পরামর্শ দিল, তাই বাবার আদেশই আমাকে মানতে হল, কলেজে গেলাম ওর কাছ থেকে বিদায় নেওয়র জন্যে। ও শুনেছে আমি চলে যাচ্ছি এই শুনে ও মন খারাপ করে বসে আছে, আমি গিয়ে বললাম মুন্নি আমি কাল সকালে চলে যাচ্ছি, ও বললো যাও যাও চলে গেলেতো আর কাউকে ধরে রাখা যায় না, আমারও বুক বেঙ্গে যাচ্ছে, যে ওকে না দেখে থাকবো কি করে, আমার পা চলছে না, মনে হচ্ছে হাঁটার শক্তি নেই, তারপর আমি বললাম রাগ করোনা প্লিজ আমরা ফোনে প্রতিদিন কথা বলব, তখন ও বললো শিশির এ কি মাটি ভিজে? বৃষ্টি না এলে, ফোনের কথায় কি মন ভরে? কাছে না পেলে, আমি বললাম জান, মনে করো আমি সবসময় তোমার সাথে আছি, তুমি কখনও আমাকে ভুলে যেও না, ও আমার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে কিছু বলছে না, আমি ওর থেকে বিদায় নিয়ে বাড়িতে চলে এলাম, আম্মুকে বললাম আম্মু আমার যেতে ইচ্ছা করছে না, আম্মু বললো কি বলছ বাবা দরকার হলে পড়াশোনার জন্য বিলেতেও যেতে হয় যাও বাবা অমত করো না, আম্মুতো জানেনা কেন আমি যেতে চাচ্ছি না, যাক আর কি করবো পরের দিন আমি ঢাকায় চলে গেলাম, ফোনে প্রতিদিন আমাদের কথা হতো, রাত পার হয়ে যেত কিন্তু আমাদের কথা শেষ হত না, এর মধ্যে দুই মাস চলে গেল আমি এক বার এসে ওর সাথে দেখা করে গিয়েছিলাম, দুই মাস পর দেখা আনন্দটাই ছিল অন্যরকম, অনেক ঘুরাগুরি করলাম, মজা করলাম তারপর আমি আবার ঢাকায় চলে গেলাম, আবার ফোনে চলতে থাকে আমাদের কথা, এর মধ্যে আমার এক সেমিষ্টার ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হয়ে গেল, ও জানতো আমার পরীক্ষা, এর জন্য ওকে আমি কিছু দিন ফোন দিতে পারিনি, এর মধ্যে ও আমাকে একদিন ও ফোন করেনি, পরীক্ষার পর ওকে আমি ফোন করে দেখি ওর নাম্বারটা বন্ধ, অনেক চেষ্টা করেও ওকে আমি পাচ্ছিলাম না, আমার কিছুই ভাল লাগেছে না, ভাবলাম কখন যে কথা বলবো ওর সাথে, আমার পরীক্ষার মাঝে ওর ফোন বন্ধ ছিল কিনা তা আমি জানতাম না, পরীক্ষা শেষ হল চার পাঁচ দিন হয়ে গেল কিন্তু এখনো ওর ফোন বন্ধ, ওর শুধু একটাই নাম্বার ছিল আমার কাছে, কি যে করি কিছুই ভেবে পাচ্ছিলাম না, ওর বন্ধ সিমে আমি একটা এস এম এস পাঠিয়ে দিলাম, কিন্তু কোন রিপ্লাই পেলাম না, সারাক্ষণ ওর নাম্বারে ট্রাই কররতাম কিন্তু কোন কাজ হতনা বন্ধই পেতাম, এর দুই তিন দিন পর কলি আমাকে ফোন করে বললো ভাইয়া তুমি তাড়াতাড়ি বাড়িতে চলে আসো মুন্নির বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে, আমি হঠাৎ করে চমকে উঠলাম বললাম কি? তুই সত্যি বলছিস?? ও বললো হা ভাইয়া সত্যি বলছি, আমার ও বিশ্বাস হল কারন অনেক দিন ওর ফোন বন্ধ,আমি আর দেরি না করে সবকিছু গুছিয়ে বাড়ি চলে এলাম, পরের দিন আমার বন্ধু রনির বারিতে গেলাম, রনির বারি মুন্নির পাশের বারি, রনি আগে থেকেই সব জানতো, রনি আমাকে দেখে বললো মুন্নির নাকি বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে? আমি বললাম সত্যি নাকি? রনি বললো আমি শুনেছি সত্যি কিনা তা জানিনা, আমি রনিকে বললাম আমিও তাই শুনেই ঢাকা থেকে চলে আসলাম, ওর সাথে দেখা করার খুব দরকার, প্লিজ ওকে একটু ডেকে নিয়ে আয় না, আমি ওর থেকে শুনতে চাই ও কি ওই বিয়েতে রাজি কিনা, রনিকে পাঠালাম ওদের বারিতে, অনেকক্ষণ হয়ে গেল কিন্তু রনিতো এখনো আসছেনা মুন্নিকে নিয়ে, আমি খুব চিন্তায় পরে গেলাম কি জানি কি হয়, একটু পরে দেখি রনি আসছে মুন্নিকে নিয়ে, ও আমার সামনে এসে দাড়াতেই বললাম কি হয়েছে তোমার? ও বললো কই কিছু হয়নি তো, আমি বললাম তাহলে তোমার ফোন বন্ধ কেন, ও বললো আমার বাবা আমার বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে ফোনে কথা বলে আর কি হবে, এ কথা শুনার পর যেন আকাশটা ভেঙ্গে আমার মাথায় পড়লো, আমি বললাম কি বলছো মুন্নি আমাদের ভালবাসার কি হবে? আমিতো তোমাকে ছাড়া অন্য কিছু ভাবতেই পারিনা, প্লিজ তুমি এরকম করনা, চল আমরা পালিয়ে যাই, ও বললো না আমি পারবনা আমার বাবার মুখে চুনকালি দিতে, আর তোমার সাথে পালিয়ে গিয়ে কি লাভ হবে আমার, তুমিতো সাধারন দিপ্লমা করতেছ, যার সাথে আমার বিয়ে টিকে হয়েছে সে আয়ারলেল্ডে থাকে, নিজের বিজনেস আছে, বিয়ের পর আমাকেও আয়ারলেল্ডে নিয়ে যাবে, ওর কথা গুলো শুনে আমার চোখে অশ্রু চলে এল আর কান্না ধরে রাখতে পারলাম না, হয়তো কেউ ওকে এই এই কথা গুলো শিখিয়ে দিয়েছে, আর না হলে কেন একথা বলছে, যে আমাকে পাগলের মত ভালোবাসতো হঠাৎ করে এত বদলে যেতে পারেনা, আমি বললাম তাহলে কেন আমাকে মিথ্যা আশ্বাস দিয়েছিলে? ও চুপ করে দারিয়ে রইল, আমি বললাম আজ তুমি রঙ্গিন চশমা পরে লোভের মুখে অন্ধ হয়ে গেছ আমার কোন কথা তোমার কানে যাচ্ছে না, স্বার্থপরের মত আমাকে আজ দূরে ঠেলে দিচ্ছ, ও বললো এটাই আমার শেষ কথা আমি আর তোমার সাথে কোন কথা বলতে চাই না, একথা শুনে আমার মাথা ঘুরছে মনে হল এক নিমিশেই পৄথিবীটা অন্দ্বকারে ঢেকে গেল, আমি দাঁড়ানো থেকে বসে পরলাম, রনি আমাকে ধরে আমাদের বাড়ীতে নিয়ে এল, এর পর থেকে আমি খুব অসুস্হ হয়ে পরলাম, আসলে মনের শক্তি মানুষের সব থেকে বড় শক্তি, মনে শক্তি না থাকলে শরিরের শক্তি কোন কাজে আসে না, আমি ওর চিন্তায় দিন দিন কেমন জানি হয়ে যাচ্ছি, এই পৄথিবীর কোর আকর্ষনই আর আমার কাছে নেই, বাড়িতে কেউ জানেনা কেন আমার এই অবস্থা, সবাই জানে আমি জ্বরের কারনে অসুস্থ, কলি আমার কাছে বসে আছে কিছু বলার মত ভাষা নেই ওর, আমার কষ্টে ও আজ নিরব, বিকালে রনি আসলো ,আমি বললাম আমার কিছুই ভাল লাগছে না, এই পৄথিবীতে বেচে থেকে আমার কোন লাভ নেই, আমাকে আকরশন করার মতো এই পৄথিবীতে আর কিছুই নেই, তাই আমি সিদান্তু নিয়েছি নিজেকে শেষ করে দেব, রনি আর কলি আমাকে অনেক বুঝালো, বললো কাপুরুষের মতো কথা বলিস না, জীবন মানে যুদ্ব, জিবনের সাথে যুদ্ব করেই বেঁচে থাকতে হবে, আমি বললাম কি নিয়ে বেচে থাকবো বল, নিরঘুম রাত আর এলোমেলো সময়ে মনে পরে শুধু ওর কথা, বার বার চোখের সামনে ভেসে উঠে ওর মুখক্ষানি, এরই মাঝে দশ বারো দিন চলে গেল, রনি আমাকে ওর বিয়ের আগের দিন ফোন করে জানালো কাল মুন্নির বিয়ে, একথা শুনে আমি আরও অসুস্থ হয়ে যাই, ওর বিয়ের দিন আমি উঠে বসার শক্তিও পাচ্ছিলাম না, বধু সাজে ওকে দেখতে খুব ইচ্ছা করছিল, কিন্তু কি করে দেখবো আমি যে উঠে দাড়াতে পারছি না, রাত হয়ে গেল, আজ ওর বাসর আর আমি বিছানায় শুয়ে শুয়ে কাদছি, অসুস্থ অবস্তায় একটা গান গাইতে লাগলাম,
সুখের বাসরে তুমি ঘুমিয়ে যখন
আমার দুই চোখে জল ঝরছে তখন
পূর্ণতা পেল আজ তোমার জীবন
আমার জীবন ঘিরে নামলো আধার
নিঃস্ব হলাম আমি নিঃস্ব হলাম
তোমাকে হারিয়ে আমি সব হারালাম।
রাত প্রয় শেষ কিন্তু আমার ঘুম আসে না, আজ আমার মুন্নি অন্যজনের হয়ে গেল, ঘুম নেই দুটি চোখে অনেক কষ্ট জমাট ভরা আমার এ জীবন, এ কষ্টকে ভুলতে অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু না তা আর হল না আরো অনেক কষ্ট নিয়ে চলছি, কেন এমন হল, জানি অনেক কথারই হয়না উত্তর, তবুও কেন এত কষ্ট পেলাম, সত্যি এই পৄথিবীটা অনেক মারাময়, আমারও তো একটা স্বপ্ন ছিল সেই স্বপ্নটা কেন সফলতা পেল না, কেন আজ আমি এত কষ্টের আগুনে জ্বলে পুড়ে মরছি, আমি কি অপরাধ করেছিলাম জানিনা, এভাবে কষ্টের আগুনে পুড়তে পুড়তে চলে গেল প্রয় আরাই বৎসর, মুন্নি কেমন আছে তা আমি আজও জানিনা,ওর সাথে আর যোগাযোগ হয়নি আমার মনে হয় ও অনেক সুখে আছে, এর কয়েক দিন পর রনি আমাকে ফোন করে বললো, মুন্নির নাকি ডিবোর্ছ হয়ে গেছে ওর নাকি এক বৎসরের একটা কন্যা সন্তান ও আছে, আমি শুনে অবাক হয়ে গেলাম, হায় আল্লাহ এটা কি হল, ওর জীবনটা আবার কেন এমন হল, ও নাকি ওর বাপের বাড়ি চলে এসেছে, আমি অনেক চেষ্টা করেছি ওর সাথে দেখা করতে কিন্তু কিছুতেই ওর দেখা পেলাম না, ইচ্ছা করে যদি কেউ নিজেকে আড়াল করে রাখে তাহলেতো কেউ তাকে খুজে পাবে না, অনেক বার রনিকে পাঠিয়েছি কিন্তু ও ঘর থেকেই নাকি বাইরে আসে না , এরপর আমি প্রতিদিন রনিদের বাড়িতে যেতাম যদি মুন্নির সাত একবার দেখা হয় এই ভেবে, একদিন আমি রনিদের বাড়ি থেকে আসার পথে দূর থেকে দেখলাম রিক্সশায় করে আসছে মুন্নি, দূর থাকেই ওকে দেখে আমি চিনে ফেলিছি, কাছে আসতেই ওর রিক্সশার সামনে গিয়ে দারালাম আমি, চালক রিক্সশা বন্ধ করলো, আমি ওর কাছে গিয়ে বললাম কেমন আছ? ও নিচের দিকে তাকিয়ে আছে,আমি বললাম কথা বলছনা যে? ও আমার দিকে তিকিয়ে কেদে ফেললো, ওর বাচ্ছাটা কোলে, এত সুন্দর হয়ছে ঠিক যেনো মুন্নির মত, বাচ্চাটা আমার দিকে তাকিয়ে আছে মায়াবিন দৃষ্টতে, মুন্নি কাদতেছে আমি বললাম রিক্সশা থেকে নামো, ও নামছে না, অনেক পিড়াপিড়ি করে ওকে নামালাম, আমি একটা সি এন জি ডেকে বললাম চল, ও কাঁদতে কাঁদতে বললো কোথায়? আমি বললাম তোমার ব্যাপার সব আমি জেনেছি,তারপরও আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই, চল কাজী অফিসে যাব, ও আমাকে না বললো, এর পর আমি আর কিছুতেই ওকে রাজি করাতে পারলাম না, অনেক চেষ্টা করলাম কোন কাজ হল না, ও চলে গেল, আমি দাড়িয়ে দাড়িয়ে কাঁদতে লাগলাম, আজ আমি আমার সব কষ্ট ভুলে গেছি, ওর দুঃখে আজ আমি সবচেয়ে বড় দুঃখী, পৄথিবীতে যাকে এতো বেশী ভালবাসি সেই আজ সুখে নেই, এটা মেনে নিতে পারছিলামনা, কেন এমন হল, হায়রে নিয়তি, নিয়তি মানুষকে কখন কোথায় নিয়ে যায় তা কেউ কখনো বলতে পারে না, আজ আমি নিয়তির স্বীকার, তারপরও আমি মুন্নির অপেক্ষায় আছি, যদি কোন দিন ফিরে আসে বরন করে নেব।
গল্পটি ভাল লাগলে আমার ফেসবুক আইডি থেকে ঘুরে আসতে পারেন
*মুন্নি*
কয়েক দিন কলেজে তোমাকে দেখছি না, জানিনা তুমি কেমন আছ, হয়তো তুমি আমাকে চেননা। তুমি যে কলেজে পড় আমি সেই একই কলেজে পড়ি, তোমার বান্ধুবি কলির কাছে আমি তোমার নামটা যেনেছি, অনেক সুন্দর তোমার নামটা তারচেও সুন্দর তুমি, তোমাকে যেদিন প্রথম কলেজে দেখি সেই দিন থেকেই আমার ভিতরে সুন্দর একটা অনুভুতির জন্ম হয়ছে, যা আমাকে বার বার দুর্বল করে দিচ্ছে এটা অন্যরকম একটা ভাললাগা,কাউকে ভাললাগা কি অন্যায় কিনা তা জানিনা, তবে তোমাকে আমার ভাল লাগে আর সেই ভাললাগা থেকেই তোমাকে আমি কখন যে এতটা ভালবেসে ফেল্লাম আমি নিজেও জানিনা,অনেক ভালবেসে ফেলেছি তোমাকে, তোমার কথা ভেবে কেটে যায় আমার সারা বেলা, জানিনা আমি কোন ভুল করেছি কিনা, তবে শত ভুল আর বাধা পেরয়ে আমি তোমার হতে চাই, এই মনটা সারাক্ষণ ভেবে যায় তোমার কথা, নিস্পাপ এই মনটাকে কি দিয়ে বুঝাব বল,আমি যে আর পারছি না, I LOVE YOU *মুন্নি* I LOVE YOU
এই চিঠিটা পাওয়া মাত্রই তুমি আমাকে উত্তর দিও। অপেক্ষায় থাকব
ইতি-
(স্বপ্নের মানুষ)
তারপর কলিকে চিঠিটা দিয়ে আমি চলে গেলাম, আমি কলির কাছে জানতে পারলাম চিঠিটা ও মুন্নিকে দিয়ে দিয়েছে, কিন্তু এক সপ্তাহ হয়ে গেল আমি কোন উত্তর পেলাম না, একদিন কলেজে গিয়ে দেখি কলি আর মুন্নি দারিয়ে আছে, কলি আমাকে ডেকে বললো, ভাইয়া এদিকে এস। কলির ডাকে আমি ওদের কাছে গেলাম, আজকে অসাধারন লাগছে মুন্নিকে, এর মাঝে আস্তে আস্তে মুন্নিকে কি যেন বললো কলি,এরপর কলি বললো আমি একটু দোকানে যাচ্ছি তোমরা কথা বল, এই প্রথম মুন্নির সামনা সামনি আমি দারাবার সুযোগ পেলাম, এর আগে মুন্নি আমাকে তেমন ভাবে চিনতো না, কলি হয়তো চিনিয়ে দিয়েছে যে আমিই ওকে চিঠিটা দিয়েছি,মুন্নি আমাকে বললো আপনিই কি কলির মামাতো ভাই? আমি বললাম হা, ও হেসে আমাকে বললো ভাইয়া, আপনি মনে হয় আমাকে একটা চিঠি দিয়েছিলেন?চিঠির কথা শুনে আমি লজ্জায় আর ওর দিকে আর তাকাতে পারলাম না, আমি নিচের দিকে তাকিয়ে বললাম হা, ও বললো ভাইয়া আমিতো এখনো অনেক ছোট, এই মুহূর্তে এরকম একটা সম্পর্কে জারানো কি ঠিক হবে আমার জন্যে?আমি কিছু বলতে পারছিলামনা, আমার হার্টবিট বারতে লাগলো,আমি নিচদিকে তাকিয়েই বললাম ঠিক আছে আমি তাহলে এখন যাই, এই বলে আমি চলে এলাম, ওর সামনে গেলে কেন আমার সবকিছু এমন উলট-পালট হয়ে যায় কিছুই বুঝতে পারছিলামনা, তারপর দশ বারো দিন চলে গেল ওর সাথে আমার কোন কথা হয়না ওকে দেখলে আমি অন্য দিক দিয়ে চলে যেতাম, ভাবলাম আর কখনো ওর সামনে যাবো না, আমাকে দিয়ে এগুলো কিচ্ছু হবেনা, তারপরও ওকে ভাবতে আমার ভাল লাগতো, অনেক দিন হয়ে গেল ওর সাতে আমার দেখা হয় না, একদিন কলি আমাকে বললো মুন্নি নাকি আমাকে খুজতেছে, কলির কথা শুনে আমি ততটা গুরুত্ত দিলামনা, আমি কয়েকদিন কলেজে যেতে পারি নাই যার কারণে কলি বা মুন্নি কারও সাথেই আমার যোগাযোগ হয়নি, তারপর একদিন আমি কলেজে গিয়ে দেখি আমাদের কলেজের সামনে ছোট একটা ফুল বাগান ছিল ওখানে দারিয়ে আছে মুন্নি, আমাকে দেখে এগিয়ে এসে বললো ভাইয়া অনেক দিন আপনাকে দেখছি না কেমন আছেন? আমি তারপরও ওর দিকে তাকাতে পারছিলামনা অনেক কষ্টে ওর দিকে তাকিয়ে বললাম ভাল, তুমি কেমন আছ? ও বললো জি ভাল আছি, আজ ও এমন ভাবে সেজেছে যে অনেক সুন্দর লাগছে ওকে, মনে হয় ডানা কাটা পরি মাটিতে নেমে এসেছে, আমি কিছুক্ষণ এক দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে থেকে বললাম তুমি অনেক সুন্দর, ও আমাকে বললো কি যে বলেন না ভাইয়া, আমি বললাম সত্যি বলছি একটা মানুষ এত সুন্দর হতে পারে এটা আমার জানা ছিল না, তারপর ও সজোরে হেসে বললো আপনি পারেনও ভাইয়া। এভাবে প্রতিদিন আমাদের কথা হত, কথা বলতে বলতে এক সমায় আমাদের প্রেম হয়ে যায়, একজন অন্যজনকে না দেখে থাকতে পারতাম না, ও আমাকে বলতো তোমাকে একদিন না দেখলে মনে হয় যেন আমার দম বন্ধ হয়ে যায়, আমিও ওকে না দেখলে থাকতে পারতাম না, ও আমাকে গান শুনাত, একদিন তোমাকে না দেখলে বড় কষ্ট হয়,সেই দিনটাই যেন আমার বন্ধু নষ্ট হয় বড় কষ্ট হয়। ওকে পেয়ে মনে হল আমি যেন বিশ্বটাকে জয় করে ফেলেছি, এভাবে প্রায় সাত মাস চলে গেল, এরই মধ্যে আমার ইন্টেরমিডিয়েট শেষ হয়ে গেল, বাবা আমাকে ডিপ্লমা পড়ানোর জন্য ঢাকা পাঠাবে বলে ঠিক করলেন, কিন্তু মুন্নি কুমিল্লায় থাকবে আর আমি ঢাকায় চলে যাব এটা কিছুতেই আমার মন চাচ্ছিল না, মুন্নিকে বল্লে ও আমাকে ঢাকাতেই ডিগ্রি পরার পরামর্শ দিল, তাই বাবার আদেশই আমাকে মানতে হল, কলেজে গেলাম ওর কাছ থেকে বিদায় নেওয়র জন্যে। ও শুনেছে আমি চলে যাচ্ছি এই শুনে ও মন খারাপ করে বসে আছে, আমি গিয়ে বললাম মুন্নি আমি কাল সকালে চলে যাচ্ছি, ও বললো যাও যাও চলে গেলেতো আর কাউকে ধরে রাখা যায় না, আমারও বুক বেঙ্গে যাচ্ছে, যে ওকে না দেখে থাকবো কি করে, আমার পা চলছে না, মনে হচ্ছে হাঁটার শক্তি নেই, তারপর আমি বললাম রাগ করোনা প্লিজ আমরা ফোনে প্রতিদিন কথা বলব, তখন ও বললো শিশির এ কি মাটি ভিজে? বৃষ্টি না এলে, ফোনের কথায় কি মন ভরে? কাছে না পেলে, আমি বললাম জান, মনে করো আমি সবসময় তোমার সাথে আছি, তুমি কখনও আমাকে ভুলে যেও না, ও আমার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে কিছু বলছে না, আমি ওর থেকে বিদায় নিয়ে বাড়িতে চলে এলাম, আম্মুকে বললাম আম্মু আমার যেতে ইচ্ছা করছে না, আম্মু বললো কি বলছ বাবা দরকার হলে পড়াশোনার জন্য বিলেতেও যেতে হয় যাও বাবা অমত করো না, আম্মুতো জানেনা কেন আমি যেতে চাচ্ছি না, যাক আর কি করবো পরের দিন আমি ঢাকায় চলে গেলাম, ফোনে প্রতিদিন আমাদের কথা হতো, রাত পার হয়ে যেত কিন্তু আমাদের কথা শেষ হত না, এর মধ্যে দুই মাস চলে গেল আমি এক বার এসে ওর সাথে দেখা করে গিয়েছিলাম, দুই মাস পর দেখা আনন্দটাই ছিল অন্যরকম, অনেক ঘুরাগুরি করলাম, মজা করলাম তারপর আমি আবার ঢাকায় চলে গেলাম, আবার ফোনে চলতে থাকে আমাদের কথা, এর মধ্যে আমার এক সেমিষ্টার ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হয়ে গেল, ও জানতো আমার পরীক্ষা, এর জন্য ওকে আমি কিছু দিন ফোন দিতে পারিনি, এর মধ্যে ও আমাকে একদিন ও ফোন করেনি, পরীক্ষার পর ওকে আমি ফোন করে দেখি ওর নাম্বারটা বন্ধ, অনেক চেষ্টা করেও ওকে আমি পাচ্ছিলাম না, আমার কিছুই ভাল লাগেছে না, ভাবলাম কখন যে কথা বলবো ওর সাথে, আমার পরীক্ষার মাঝে ওর ফোন বন্ধ ছিল কিনা তা আমি জানতাম না, পরীক্ষা শেষ হল চার পাঁচ দিন হয়ে গেল কিন্তু এখনো ওর ফোন বন্ধ, ওর শুধু একটাই নাম্বার ছিল আমার কাছে, কি যে করি কিছুই ভেবে পাচ্ছিলাম না, ওর বন্ধ সিমে আমি একটা এস এম এস পাঠিয়ে দিলাম, কিন্তু কোন রিপ্লাই পেলাম না, সারাক্ষণ ওর নাম্বারে ট্রাই কররতাম কিন্তু কোন কাজ হতনা বন্ধই পেতাম, এর দুই তিন দিন পর কলি আমাকে ফোন করে বললো ভাইয়া তুমি তাড়াতাড়ি বাড়িতে চলে আসো মুন্নির বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে, আমি হঠাৎ করে চমকে উঠলাম বললাম কি? তুই সত্যি বলছিস?? ও বললো হা ভাইয়া সত্যি বলছি, আমার ও বিশ্বাস হল কারন অনেক দিন ওর ফোন বন্ধ,আমি আর দেরি না করে সবকিছু গুছিয়ে বাড়ি চলে এলাম, পরের দিন আমার বন্ধু রনির বারিতে গেলাম, রনির বারি মুন্নির পাশের বারি, রনি আগে থেকেই সব জানতো, রনি আমাকে দেখে বললো মুন্নির নাকি বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে? আমি বললাম সত্যি নাকি? রনি বললো আমি শুনেছি সত্যি কিনা তা জানিনা, আমি রনিকে বললাম আমিও তাই শুনেই ঢাকা থেকে চলে আসলাম, ওর সাথে দেখা করার খুব দরকার, প্লিজ ওকে একটু ডেকে নিয়ে আয় না, আমি ওর থেকে শুনতে চাই ও কি ওই বিয়েতে রাজি কিনা, রনিকে পাঠালাম ওদের বারিতে, অনেকক্ষণ হয়ে গেল কিন্তু রনিতো এখনো আসছেনা মুন্নিকে নিয়ে, আমি খুব চিন্তায় পরে গেলাম কি জানি কি হয়, একটু পরে দেখি রনি আসছে মুন্নিকে নিয়ে, ও আমার সামনে এসে দাড়াতেই বললাম কি হয়েছে তোমার? ও বললো কই কিছু হয়নি তো, আমি বললাম তাহলে তোমার ফোন বন্ধ কেন, ও বললো আমার বাবা আমার বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে ফোনে কথা বলে আর কি হবে, এ কথা শুনার পর যেন আকাশটা ভেঙ্গে আমার মাথায় পড়লো, আমি বললাম কি বলছো মুন্নি আমাদের ভালবাসার কি হবে? আমিতো তোমাকে ছাড়া অন্য কিছু ভাবতেই পারিনা, প্লিজ তুমি এরকম করনা, চল আমরা পালিয়ে যাই, ও বললো না আমি পারবনা আমার বাবার মুখে চুনকালি দিতে, আর তোমার সাথে পালিয়ে গিয়ে কি লাভ হবে আমার, তুমিতো সাধারন দিপ্লমা করতেছ, যার সাথে আমার বিয়ে টিকে হয়েছে সে আয়ারলেল্ডে থাকে, নিজের বিজনেস আছে, বিয়ের পর আমাকেও আয়ারলেল্ডে নিয়ে যাবে, ওর কথা গুলো শুনে আমার চোখে অশ্রু চলে এল আর কান্না ধরে রাখতে পারলাম না, হয়তো কেউ ওকে এই এই কথা গুলো শিখিয়ে দিয়েছে, আর না হলে কেন একথা বলছে, যে আমাকে পাগলের মত ভালোবাসতো হঠাৎ করে এত বদলে যেতে পারেনা, আমি বললাম তাহলে কেন আমাকে মিথ্যা আশ্বাস দিয়েছিলে? ও চুপ করে দারিয়ে রইল, আমি বললাম আজ তুমি রঙ্গিন চশমা পরে লোভের মুখে অন্ধ হয়ে গেছ আমার কোন কথা তোমার কানে যাচ্ছে না, স্বার্থপরের মত আমাকে আজ দূরে ঠেলে দিচ্ছ, ও বললো এটাই আমার শেষ কথা আমি আর তোমার সাথে কোন কথা বলতে চাই না, একথা শুনে আমার মাথা ঘুরছে মনে হল এক নিমিশেই পৄথিবীটা অন্দ্বকারে ঢেকে গেল, আমি দাঁড়ানো থেকে বসে পরলাম, রনি আমাকে ধরে আমাদের বাড়ীতে নিয়ে এল, এর পর থেকে আমি খুব অসুস্হ হয়ে পরলাম, আসলে মনের শক্তি মানুষের সব থেকে বড় শক্তি, মনে শক্তি না থাকলে শরিরের শক্তি কোন কাজে আসে না, আমি ওর চিন্তায় দিন দিন কেমন জানি হয়ে যাচ্ছি, এই পৄথিবীর কোর আকর্ষনই আর আমার কাছে নেই, বাড়িতে কেউ জানেনা কেন আমার এই অবস্থা, সবাই জানে আমি জ্বরের কারনে অসুস্থ, কলি আমার কাছে বসে আছে কিছু বলার মত ভাষা নেই ওর, আমার কষ্টে ও আজ নিরব, বিকালে রনি আসলো ,আমি বললাম আমার কিছুই ভাল লাগছে না, এই পৄথিবীতে বেচে থেকে আমার কোন লাভ নেই, আমাকে আকরশন করার মতো এই পৄথিবীতে আর কিছুই নেই, তাই আমি সিদান্তু নিয়েছি নিজেকে শেষ করে দেব, রনি আর কলি আমাকে অনেক বুঝালো, বললো কাপুরুষের মতো কথা বলিস না, জীবন মানে যুদ্ব, জিবনের সাথে যুদ্ব করেই বেঁচে থাকতে হবে, আমি বললাম কি নিয়ে বেচে থাকবো বল, নিরঘুম রাত আর এলোমেলো সময়ে মনে পরে শুধু ওর কথা, বার বার চোখের সামনে ভেসে উঠে ওর মুখক্ষানি, এরই মাঝে দশ বারো দিন চলে গেল, রনি আমাকে ওর বিয়ের আগের দিন ফোন করে জানালো কাল মুন্নির বিয়ে, একথা শুনে আমি আরও অসুস্থ হয়ে যাই, ওর বিয়ের দিন আমি উঠে বসার শক্তিও পাচ্ছিলাম না, বধু সাজে ওকে দেখতে খুব ইচ্ছা করছিল, কিন্তু কি করে দেখবো আমি যে উঠে দাড়াতে পারছি না, রাত হয়ে গেল, আজ ওর বাসর আর আমি বিছানায় শুয়ে শুয়ে কাদছি, অসুস্থ অবস্তায় একটা গান গাইতে লাগলাম,
সুখের বাসরে তুমি ঘুমিয়ে যখন
আমার দুই চোখে জল ঝরছে তখন
পূর্ণতা পেল আজ তোমার জীবন
আমার জীবন ঘিরে নামলো আধার
নিঃস্ব হলাম আমি নিঃস্ব হলাম
তোমাকে হারিয়ে আমি সব হারালাম।
রাত প্রয় শেষ কিন্তু আমার ঘুম আসে না, আজ আমার মুন্নি অন্যজনের হয়ে গেল, ঘুম নেই দুটি চোখে অনেক কষ্ট জমাট ভরা আমার এ জীবন, এ কষ্টকে ভুলতে অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু না তা আর হল না আরো অনেক কষ্ট নিয়ে চলছি, কেন এমন হল, জানি অনেক কথারই হয়না উত্তর, তবুও কেন এত কষ্ট পেলাম, সত্যি এই পৄথিবীটা অনেক মারাময়, আমারও তো একটা স্বপ্ন ছিল সেই স্বপ্নটা কেন সফলতা পেল না, কেন আজ আমি এত কষ্টের আগুনে জ্বলে পুড়ে মরছি, আমি কি অপরাধ করেছিলাম জানিনা, এভাবে কষ্টের আগুনে পুড়তে পুড়তে চলে গেল প্রয় আরাই বৎসর, মুন্নি কেমন আছে তা আমি আজও জানিনা,ওর সাথে আর যোগাযোগ হয়নি আমার মনে হয় ও অনেক সুখে আছে, এর কয়েক দিন পর রনি আমাকে ফোন করে বললো, মুন্নির নাকি ডিবোর্ছ হয়ে গেছে ওর নাকি এক বৎসরের একটা কন্যা সন্তান ও আছে, আমি শুনে অবাক হয়ে গেলাম, হায় আল্লাহ এটা কি হল, ওর জীবনটা আবার কেন এমন হল, ও নাকি ওর বাপের বাড়ি চলে এসেছে, আমি অনেক চেষ্টা করেছি ওর সাথে দেখা করতে কিন্তু কিছুতেই ওর দেখা পেলাম না, ইচ্ছা করে যদি কেউ নিজেকে আড়াল করে রাখে তাহলেতো কেউ তাকে খুজে পাবে না, অনেক বার রনিকে পাঠিয়েছি কিন্তু ও ঘর থেকেই নাকি বাইরে আসে না , এরপর আমি প্রতিদিন রনিদের বাড়িতে যেতাম যদি মুন্নির সাত একবার দেখা হয় এই ভেবে, একদিন আমি রনিদের বাড়ি থেকে আসার পথে দূর থেকে দেখলাম রিক্সশায় করে আসছে মুন্নি, দূর থাকেই ওকে দেখে আমি চিনে ফেলিছি, কাছে আসতেই ওর রিক্সশার সামনে গিয়ে দারালাম আমি, চালক রিক্সশা বন্ধ করলো, আমি ওর কাছে গিয়ে বললাম কেমন আছ? ও নিচের দিকে তাকিয়ে আছে,আমি বললাম কথা বলছনা যে? ও আমার দিকে তিকিয়ে কেদে ফেললো, ওর বাচ্ছাটা কোলে, এত সুন্দর হয়ছে ঠিক যেনো মুন্নির মত, বাচ্চাটা আমার দিকে তাকিয়ে আছে মায়াবিন দৃষ্টতে, মুন্নি কাদতেছে আমি বললাম রিক্সশা থেকে নামো, ও নামছে না, অনেক পিড়াপিড়ি করে ওকে নামালাম, আমি একটা সি এন জি ডেকে বললাম চল, ও কাঁদতে কাঁদতে বললো কোথায়? আমি বললাম তোমার ব্যাপার সব আমি জেনেছি,তারপরও আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই, চল কাজী অফিসে যাব, ও আমাকে না বললো, এর পর আমি আর কিছুতেই ওকে রাজি করাতে পারলাম না, অনেক চেষ্টা করলাম কোন কাজ হল না, ও চলে গেল, আমি দাড়িয়ে দাড়িয়ে কাঁদতে লাগলাম, আজ আমি আমার সব কষ্ট ভুলে গেছি, ওর দুঃখে আজ আমি সবচেয়ে বড় দুঃখী, পৄথিবীতে যাকে এতো বেশী ভালবাসি সেই আজ সুখে নেই, এটা মেনে নিতে পারছিলামনা, কেন এমন হল, হায়রে নিয়তি, নিয়তি মানুষকে কখন কোথায় নিয়ে যায় তা কেউ কখনো বলতে পারে না, আজ আমি নিয়তির স্বীকার, তারপরও আমি মুন্নির অপেক্ষায় আছি, যদি কোন দিন ফিরে আসে বরন করে নেব।
গল্পটি ভাল লাগলে আমার ফেসবুক আইডি থেকে ঘুরে আসতে পারেন
No comments:
Post a Comment